সাধারণত আমাদের ফোন কেনার প্রয়োজন হলে আমাদের যেটা পছন্দ হবে অথবা শপের মালিক যদি কোন ফোনকে ভালো বলে তাহলে, সেটি আমরা কিনে নিয়ে চলে আসি। কিন্তু এটা আমাদের কখনোই করা উচিত নয়। কারণ ফোন কিনে নিয়ে আসার পরে বাসায় কিছুদিন ব্যবহার করব। তারপরে দেখা যাবে ফোন গরম হয়ে যাচ্ছে, ফোন হ্যাং হয়ে আছে, ফোন স্লো হয়ে গেছে, এবং ব্যাটারি ডাউন হয়ে গেছে অথবা ব্যাটারির চার্জ কমে যাচ্ছে। এরকম ধরনের নানান রকম প্রবলেম ফেস করতে হয়।
তাই ফোন কিনার সময় অবশ্যই আপনাকে কিছু বিষয় সতর্কতা মূলক লক্ষ্য করতে হবে। আজকে আপনাদেরকে বলবো ফোন কিনার বিষয়ে কোন কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভাবে দেখে কিনা উচিত।
একটা ফোন কেনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনাকে পারফরম্যান্স দেখতে হবে। এখানে পারফরম্যান্স বলতে বোঝানো হয়েছে, আপনি যে ফোনটি কিনবেন, সেই ফোনের র্যাম, রোম, প্রসেসর, অপারেটিং এই ৪ টি বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে। এবং এই চারটি মিলিয়ে পারফরম্যান্স হয়।
আরও জানুনঃ আপনার সন্তান কে কখন ফোন নিয়ে দেওয়া উচিত?
এখানে কথা হচ্ছে আপনি এই চারটি বিষয় কিভাবে দেখবেন অথবা দেখে নিবেন তাহলে চলুন দেখা যাকঃ
নতুন ফোন কেনার আগে যে ৪ টি বিষয়ে আপনাদের অবশ্যই জানা দরকারঃ
১/ প্রসেসরঃ প্রসেসর স্ন্যাপ ড্রাগন কি না অবশ্যই আপনা তারা দেখে নেবেন। উদাহরণস্বরূপ নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন।
স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এর বৈশিষ্ট্য হলো এটা দীর্ঘদিন যাবৎ লাস্টিং করে এবং এটা অনেক কম গরম হয় অথবা হিট হয়।
এছাড়াও আপনারা আর একটি প্রসেসর দেখে নিতে পারেন এটাও মোটামোটি স্ন্যাপড্রাগন এর মতই, প্রসেসর টির নাম হল মিডিয়াটেক উদাহরণস্বরূপ নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন
মিডিয়াটেক প্রসেসর এর বৈশিষ্ট্য হলো এটা দীর্ঘদিন যাবৎ লাস্টিং করে এবং এটা অনেক কম গরম হয় অথবা হিট হয় সম্পূর্ণই স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এর মতই।
২/ রোমঃ অর্থাৎ ফোনের স্টোরেজ বা মেমোরি কার্ডঃ
আপনারা ফোন কেনার সময় অবশ্যই ফোনের মেমোরি কার্ড বা ফোন স্টেরেজ অবশ্যই সর্বনিম্ন হলেও 64GB দেখে কিনবেন। দেখে উদাহরণস্বরূপ নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুনঃ
এখন বলি কেন আপনারা 64Gb স্টোরেজের ফোন কিনবেন। কেননা আপনি যদি 32Gb স্টোরেজের ফোন কিনেন তাহলে 20Gb চলে যাবে অপারেটিং সিস্টেমে। তাহলে থাকে 12Gb । আপনি যদি কিছু অ্যাপস ইন্সটল করেন অথবা গেমিং অ্যাপস ইন্সটল করেন, তাহলে আরো অনেকগুলো জায়গা দখল করে নেবে সম্পূর্ণ 12GB এর মধ্যে থেকে। যার কারনে আপনার ফোন অনেকটাই স্লো হয়ে যাবে। এ কারণে আপনারা 64GB স্টোরেজ দেখে ফোন কেনার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও বড় সমস্যা হল 6 মাস অথবা এক বছর পর আপনার ইন্টারনাল স্টোরেজে এ কিছু না থাকলেও সম্পূর্ণ একা একাই ভরে যাবে। রোমের ক্ষেত্রে 4x ।
৩/ র্যামঃ বর্তমান যুগে ফোনের অপারেটিং সিস্টেমে যে পরিমাণ জায়গা দখল করে, সেই অনুযায়ী 4GB এর নিচে র্যাম কিনলে ফোনের খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স পাবেন না, এখন র্যাম বলতে বোঝানো হয়েছে, র্যামের ক্ষেত্রে 2.1 এর ওপরে।
উদাহরণস্বরূপ নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুনঃ
৪/ অপারেটিং সিস্টেমঃ অপারেটিং সিস্টেম বলতে বোঝানো হয়েছে আপনি কোন ব্র্যান্ডের ফোন নিবেন। এখানে তেমন কিছু বলার নেই, তবে কিছু কিছু ব্র্যান্ডের ফোন আছে যেগুলোর সার্ভিস খুব ভালো, এই বিষয়গুলো আপনারা আপনাদের আশেপাশে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে থেকে জেনে নিতে পারেন, অথবা আমি যদি বলি স্যামসাং আইফোন। বর্তমান সময়ে ভিভো খুব ভালো চলতেছে, অপারেটিং সিস্টেম বলতে যে কোন ব্রান্ডের মোবাইল কে বোঝানো হচ্ছে, এটা আপনাদের উপর ডিপেন্ড করবে, আপনি কিরকম ফোন কিনবেন অথবা কিরকম বাজেটের ওপরে কোন ব্রান্ডের ফোন কিনবেন। তাবে সর্বশেষ আমি সেরা কয়েকটি ব্র্যান্ডের নাম সহ মডেল নিচে দিয়ে দিচ্ছি আপনারা চাইলে এর মধ্যে কিনতে পারেন।
- Apple iPhone 14 Pro Max.
- Google Pixel 7 Pro 5G.
- Apple iPhone 13 Pro Max.
- Samsung Galaxy S22 Ultra.
- vivo X80 Pro Plus 5G.
- Samsung Galaxy Z Fold 4 5G.
- Samsung Galaxy Z Flip 4 5G.
- Xiaomi 12 Pro 5G.
তারপরে আপনাদের নজর দিতে হবে ক্যামেরার দিকে, আপনারা পেছনের দিকে চারটা, পাঁচটা, ছয়টা ক্যামেরা দেখে এবং সামনের দিকে দুইটা, তিনটা ক্যামেরা দেখে পাগল হয়ে যাবেন না। যদি ক্যামেরার সেন্সর ভালো হয়, তাহলে পাঁচটা, ছয়টা প্রয়োজন নাই। একটা ক্যামেরা হলেই খুব ভালো পারফর্মেন্স পাবেন। যদি বলি সেন্সর কি? তাহলে, সানি সেন্সর খুব ভালো সেন্সর। এছাড়াও স্যামসাং এন্ড্রয়েড ফোনের সেন্সর গুলোও খুব ভালো। তারপরে আপনাদের দেখতে হবে অ্যাপাচে এর ভ্যালু, নিচের ছবিটি ভালো করে লক্ষ্য করুন।
এখানে অ্যাপাচে ভেলু যত কম থাকবে আপনার ছবি ততো ভাল আসবে। এখানে আপনাদের প্রশ্ন থাকতে পারে, সনির সেন্সর হলে অ্যাপাচে ভেলু বেশি থাকলে ছবি ভাল আসতে পারে। আসলে এরকমটা না, আপনারা সরাসরি সেইখানে একটা নিজেরা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে দেখে নিবেন। এছাড়াও আপনারা স্মার্টফোনের রিভিউটা দেখে নেবেন এক্ষেত্রে ফোন কেনার জন্য আপনাদের অনেকটা হেল্প হবে।
এরপরে আপনারা দেখবেন ব্যাটারি এবং চার্জারঃব্যাটারির ক্ষেত্রে যদি বলি তাহলে 4500 অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি এর নিচে নিবেন না। 4500 এম্পিয়ার থেকে এর ওপরে যত যেতে পারেন। এবং চার্জার এর ক্ষেত্রে তেমন কিছু বলার নেই এটা আপনারা ফোনের সাথে অরিজিনাল চার্জার পাবেন সেটাই বেটার।
এরপরে ফোনের যে বিষয়টি দেখবেন, সেটা হলো ফোনের ডিসপ্লে।
ফোনের ডিসপ্লে দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ
১ঃ আইপিএস.
২ঃ সুপার এমোলেট.
এখন আপনাদের প্রশ্ন থাকে এই দুইটার মধ্যে কোনটা নেব? এইখানে কোন দিকে না দেখি আপনারা সুপার এমোলেট নিতে পারেন। কারণ সুপার এমোলেট অনেক বেশি কালারফুল এবং স্মুথ এছাড়াও অনেক ধরনের সুবিধা পাবেন। নিচের ছবিটি ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন সুপার অ্যামোলেট ডিসপ্লে কি রকম হয়।
তবে এইখানে আমার একটা কথা ছিল সেটা হল, সুপার অ্যামোলেট ডিসপ্লে নিতে গেলে একটু বেশি টাকা লাগতে পারে, তবে যদি আপনাদের প্রবলেম না থাকে তাহলে সুপার অ্যামোলেট ডিসপ্লে নিতে পারেন, এতে আপনাদের ভালো হবে।
তারপরে আপনারা দেখবেন আপনাদের স্ক্রিনের রেজুলেশন কি আছে (HD) এইচডি নাকি (Full HD) ফুল এইচডি। তবে এক্ষেত্রে আপনারা (Full HD) ফুল এইচডি স্ক্রিন নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
সর্বশেষ আরেকটি বিষয় বলতে চাই সেটা হল, আপনারা কখনোই পুরাতন মডেলের ফোন কিনতে যাবেন না। কারণ আগের মডেল গুলার চাইতে এখনকার মডেল এর ফোন অনেক টাই আপডেট, এবং বর্তমান যুগের সাথে পুরাতন মডেলের ফোন কখনোই যায়না। যদি পুরাতন মডেলের ফোন কিনেন তাহলে অনেক কিছু মিসিং থাকবে, যাতে আপনাদের ব্যবহারের অসুবিধা হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ
আশাকরি উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর লক্ষ্য রাখলে খুব সহজে আপনি একটি ভাল মানের ফোন বাছাই করে নিতে পারবেন। এই পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আর ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুন। এরকম আরো উপকারি পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন