নতুন বোতলে পুরান মদ - এসপিসি ওয়ার্ল্ড

দেশের সাধারণ লোকদের প্রতারিত করে ফ্রিল্যান্সার, ই-কমার্স এবং অন-লাইনে টাকা ইনকামের কথা বলে  লক্ষ লক্ষ  টাকা হাতিয়া নেওয়া প্রতারক চক্রের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান : এসপিসি ওয়ার্ল্ড।

এসপিসি প্রতারক চক্র হতে সাবধান

এসপিসি ওয়ার্ল্ড দেশের সাধারণ জনেগণের নিকট থেকে ফ্রিল্যান্সার, ই-কমার্স ব্যবসা এবং অনলাইনে মোটা অংকের টাকা ইনকামরে লোভ দেখিয়ে, সহজ-সরল লোকদের প্রভাবিত করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এসপিসি ওয়ার্ল্ড দেশের সাধারণ জনেগণের নিকট থেকে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি রেজিষ্ট্রীশন ফি এর কথা বলে প্রথমে একজন ব্যক্তির নিকট থেকে প্রতিষ্ঠানটি টাকা নিয়ে থাকে। পরবর্তীতে এর কিছু অংশ কমিশন হিসাবে দেয় প্রচারক সদস্যদের এবং তাদেরকে আবার নতুন সদস্য আনার জন্য উদ্ভদ করে। কিন্তু তার বলে প্রতিষ্ঠান থেকে তাদেরকে এই কমিশনটি দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে এহেন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে এই প্রতারক চক্রের প্রতিষ্ঠানটি বিস্তার লাভ প্রায় সারাদেশ জালের মত ছেকে ধরেছে। এদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রত্যারিত হচ্ছে দেশের হাজার হাজার সহজ-সরল মানুষ। তথ্য ফ্রযুক্তির মধ্যে থাকি বলে অনেক সময় অনেক মানুষের নিকট প্রশ্নের সম্মুখীন হয়, আসলে এসপিসিটা কি ? তারা উক্ত প্রতিষ্ঠানে রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবে কি না ? কোন সম্যসা হবে কি না ? এই সব বিষয়ে নিয়ে নানাবিধি প্রশ্ন করে থাকে।

এসপিসি প্রতিষ্ঠানে অভিযান

আমি বিষয়টি  প্রায় একবছর পূর্বে জানতে পারি আমার একজন বন্ধু আবূ রায়হানের নিকট থেকে। সে আমার নিকট আসে তার এসপিসি এ্যাকাউন্ট সেটআপ করতে সম্যসার সম্মুখীন হয়ে সহযোগীতা নিতে। তখন এসপিসির   প্রতিষ্ঠাতা আলামিন এর বিরুদ্ধ প্রতারিত বাইশ লাখ মানুষের নিকট থেকে তিনশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আসেনি। আমার বন্ধু আমাকে এই বিষয়টি অবগত করার পরে আমি আমার বন্ধুকে প্রশ্ন করলাম "দোস্ত তুমি এই প্রতিষ্ঠানে সদস্য হওয়ার পরে তোমাকে প্রতিষ্ঠানটি যে টাকা দিবে এটা তারা কি ভাবে দিবে ? তাদের ব্যবসা কি ? অথবা তোমাকে যে কাজটি দিবে সেটা কোন কাজের বিনিময়ে ? কি ধরনের কাজ ?" 

আমার বন্ধু তখন এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারিনি বরং সে আমেরিকায় অবস্থানকারী এক ব্যক্তির নিকট আমাকে ফোনে ধরিয়ে দেয়। আমি একই ভাবে  ফোনে উক্ত ব্যক্তির কাছে প্রশ্ন করি এবং তিনিও আমাকে স্বাভাবিক ভাবে কোন সঠিক উত্তর না দিতে পারায় আমি খুব হতাশ হয়। আর আমি নিজের কাছে প্রশ্ন করতে থাকি আসলে এটা কিভাবে ইনকাম করে ? এই বিষয়টি নিয়ে গুগল, ইউটিব সহ অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে যেয়ে আমি সার্চ করে জানতে চেয়েও সঠিক কোন সমাধান খুঁজে পাইনি। 

তখন আমি নিশ্চিত হয়ে আমার বন্ধুকে বোঝানোর চেষ্টা করি "এটা নিশ্চয় একটি ভূয়া প্রতিষ্ঠান" এটি পূর্বের ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড এর ন্যায়ে এর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরা অবৈধ ভাবে মানুষকে প্রতারিত করে টাকা ইনকাম করছে। তাদের কোন বৈধ উপার্জন নাই, এরা এদের উদ্দেশ্য হাসিলের পর, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সাধারন মানুষকে প্রতারিত করে লেজ গুটিয়ে পালিবে। 

আমি তাকে আরো বলিযে, দেখ আমাদের ইসলাম ধর্মে আছে বৈধ ইনকামের জন্য পন্য বা শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করতে হয়। কিন্তু আমার জানামতে এখানে তোমাকে তেমন কোন শ্রম দিতে হচ্ছে না বা তুমি কোন পন্যও তাদের কে দিচ্ছো না। তাহালে তোমাকে তারা কিভাবে উপার্জন করাতে সক্ষম হবে ?, মূলকথা এসপিসি হলো মাল্টিলেভেল মার্কেটিংএর ডিজিটাল সংস্কারণ। সরকারিভাবে ঘোষিত একটি অবৈধ অর্থ উপার্জনের প্রতিষ্ঠান। 

এসপিসি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আলামিন আটক

সাবেক ডেসটিনি-২০০০ লি: বন্ধ হওয়ার পর তারই কার্যক্রমকে লক্ষ্য করে তারই রূপ অত্যাধুনিক করে, সংযোজনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছে এসপিসি ওয়ার্ল্ড নামক অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি এবং এর কার্যক্রম সেই পূর্বের ন্যায়। 

উক্ত প্রতিষ্ঠানটি পুরনো কোন সদস্যের নিকট থেকে রেজিষ্ট্রেশন ফি এর নাম করে ১২০০ টাকার বিনিময়ে একটি এ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেয় এবং পরবতীতে সেই একাউন্টে ৫০০ টাকা রিটার্ন দেয়। অত:পর তারা বলে ঐ একাউন্টে প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমা হবে ০৫ টি করে এ্যাড দেখার বিনিময়ে।এই ধরনে কথা বলে তারা সাধারন মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে তুমি যদি ১০০ টি এ্যাকাউন্ট ক্রয় কর, তাহলে তুমি এ্যাড ভিউ  করে  প্রতিদিন ১০০০ টাকা করে ইনকাম করতে পারবে। শুধু তাই নয় এর রয়েছে রেফার বোনাস  হিসাবে তোমার অধীনে ১০টি আইডি থেকে ২০ টাকা করে ২০০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন ১২০০ টাকা আয় করা যাবে এসপিসি থেকে। সে হিসাবে তারা মাসে ৩৬,০০০ টাকা ইনকামের একটি   স্বপ্ন দেখায়। দীর্ঘদিন পর আমার সেই বন্ধু গতকাল আমার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার থেকে আমাকে তার এসপিসি স্টার ব্যাচের একটি ছবি পাঠিয়েছে। 

খুবই আগ্রহের সাথে সবাইকে হয়তো জানতে ইচ্ছা করছে স্টার হতে গেলে কারো অধীনে ৩০০ আইডির মালিক হতে হয় কি না ? যদি এমনটি হয় তাহলে তার প্রতি মাসের ইনকাম আসবে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা অথবা তারও বেশি হয়তো। 

আমার কোন কাছের বন্ধু কাজ না করে মাসে এত টাকা ইনকাম করবে এটা আমার জন্য  অবশ্যই সুখবর বটে তবে আমি আমার বন্ধুর উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চায়, সে যা করছে সেটাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে না, ই-কমার্সও বলে না। আসলে সে কি ?

আমি বলবো আসলে সে একটি প্রত্যারকচক্রের সাথে জড়িত হয়েছে। সে যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখে ইনকার করে তা আমার  বোধগম্য নয়, তবে আমার জানামতে এসপিসির কিছু নিম্নমানের প্রোডাক্ট রয়েছে, যে প্রোডাক্টগুলোর বিজ্ঞাপন কেউ দিতে চাই না। সে কারণে বিজ্ঞাপন দেখা বাবদ টাকাও দেয় না কেউ। এরা মাছের তেলে মাছ ভাজছে। এমন একদিন আসবে দেখবে বিড়ালের মত ভাজা মাছটা মুখে নিয়ে লেজ গুটিয়ে পালাবে। আর খুজে পাওয়া যাবে না। 

বর্তমানে বিভিন্ন অনালইন পোর্টল এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা যায় ক্রিকেট জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মাশরাফি বিন মুর্তেজা এমনই একজন বিজ্ঞাপক হিসাবে চুক্তিবদ্ধ হয় এসপিসির কাছে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি উক্ত প্রতারনার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে গতকাল তিনি উক্ত প্রতারক চক্র থেকে তার চু্ক্তিনামা বাতিল করে এবং তিনি একজন উকিলের মাধ্যমে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি উকিল নোটিশ প্রেরণ করেন। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিকাশ, নগদ, রকেট বিভিন্ন অর্থ লেনদেনের মাধ্যমগুলোকে উক্ত এসপিসি নামক অবৈধ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে  সবধরনের লেনদেন নিষিধের ঘোষনা দিয়েছেন।

আরও জানুনঃ বাংলাদেশের সেরা ৫ টি আইটি ট্রেনিং সেন্টার

আশা করি বাংলাদেশ সরকর অতি দ্রুত এসপিসি এর মত অন্যান যত ধরনের প্রতারক চক্রের অবৈধ প্রতিষ্ঠান আছে সে গুলো অবৈধ ঘোষনা করে প্রতারকদের আটক করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির মাধ্যমে দেশে সাধারণ জনগণকে প্রতারনার হাত থেকে  রক্ষা করে আর্থিক ক্ষতি সাধন হতে রক্ষা করবে।  

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url