কীভাবে বায়ার রিকুয়েষ্ট পাঠালে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে?

বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং পেশা এতোটাই জনপ্রিয় যা বলে শেষ করা যাবে না? আজ থেকে ৩-৪ বছর আগেও ফ্রিল্যান্সিং শব্দের সাথে  শতকরা ৮০% মানুষ পরিচিত ছিলো না। আর বর্তমানে আপনার আমার আশে পাশে তাকলেই ২/৩ জন ফ্রিল্যান্সার দেখতে পাওয়া যায়। 

আগের সময় শিক্ষিত মানুষ কম ছিলো আর সে সময়টায় যারা একটু শিক্ষিত হয়েছিলো তারাই কিন্তু ভাল মানের চাকুরী করতো। অর্থাৎ তখন কার সময়ে চাকুরীর বাজারে যোগ্য লোকের অভাব ছিলো তাই প্রতিযোগিতাও ছিলো না। কিন্তু আমরা যদি এখকার সময়ের কথা চিন্তু করি তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যায় বেশি অর্থাৎ চাকুরীর বাজার সেই আগের মতো আর নেই। এখন যোগ্য জনবল থাকলেও কাঙ্খিত কর্মসংস্থান নেই। এই বাজারে এখন অনেক প্রতিযোগিতা আর এই প্রতিযোগিতায় একটি ভাল চাকুরীর জন্য হাজার হাজার শিক্ষিত চাকুরী প্রার্থীদের চেয়ে নিজেকে আলাদা ভাবে মেলে ধরতে পারলেই কেবল একটি ভাল চাকুরীর আশা করা যায়।

এখন আসি  ফ্রিল্যান্সিং এ ! আগের সময়ে এই চাকুরীর বাজারের মতোই ফ্রিল্যান্সিং পেশায় দক্ষ লোকজন  অনেক কম ছিলো তাই প্রতিযোগিতাও ছিলো হাতে গোনার মতো, আর যারাই একটু কাজ জানত তারাই ফ্রিল্যান্সিং পেশাতে খুব কম সময়ে নিজের জায়গা তৈরী করে নিতে পারত। কিন্তু এখন সেই একই কথা চাকুরীর বাজারের ন্যায় লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার বসে আছে কিন্তু কাজ পাচ্ছে না। তাহলে এর কারন হিসেবে আপনি কী বুঝলেন? শ্রমিক আছে অনেক কিন্তু কাজের পরিমান অনেক কম। আর যে কাজ আছে সেটিও পায় অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা। তাহলে কী  আমরা আপনারা যারা নতুন ফ্রিল্যান্সাররা আছি তারা কী কাজ পাবো না? আমরা কী ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সফল হতে পারব না?

এর উত্তর হ্যাঁ,  আবার না উভয়।

প্রথমে আসি উত্তর না নিয়ে..

আপনি যদি বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারেন, তাহলে আপনার পক্ষে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব না। আবার আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এর সঠিক গাইড লাইন,বায়ারের চাহিদা,মার্কেট ভ্যালু,আপডেট কাজ ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারনা না  রাখেন তাহলেও সম্ভব না। 

দ্বিতীয়তে আসি উত্তর হ্যাঁ নিয়ে..

আপনি চাইলেই  ফ্রিল্যান্সিং পেশায় খুব কম সময়ে নিজের  একটি ভাল জায়গা তৈরী করতে পারবেন।

এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে, প্রথমত আপনাকে সময়ের সাথে আপডেট হতে হবে, সময় নিয়ে ভাল মানের কাজ শিখতে হবে, প্রোপার গাইডলাইন ফলো করতে হবে আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো নিজেকে অবশ্যই অন্যের চেয়ে আলাদা করে তুলতে হবে। তাহলেই খুব কম সময়ে আপনি সফলতার মুখ দেখতে পাবেন।


দ্রুত কাজ পাওয়ার সিক্রেট টিকস জানতে নিচের পোস্টগুলো দেখুন। 

বায়ার রিকুয়েষ্ট/বিড/প্রোপেজাল কীঃ-

প্রায় প্রত্যেক  ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে দুই ভাবে কাজ হয়ে থাকে। প্রথমত কনষ্টেট আর দ্বিতীয়ত হায়ারিং। এখন কনষ্টেট হলো এমন একটি প্রসেস যেখানে বায়ার একটি কাজ করে নেওয়ার জন্য সকল বিবরন দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ ও সময় নির্ধারন করে কাজটি পাবলিশ করে। এখন সেখানে হাজার হাজার ফ্রিল্যান্সাররা কাজের নমুনা জমা দেয় এর মধ্য থেকে যে কোন একজন কে চুড়ান্ত করে এবং পেমেন্ট করে। 

আর দ্বিতীয় হলো হায়ারিং পদ্ধতি এখানে বায়ার নিজে থেকেই তার চাহিদা মতো সেলারী বা ফ্রিল্যান্সার কে তার কাজের জন্য নির্ধারন করে। এখন এই হায়ারিং পদ্ধতিকে আবার কিছু সিস্টেমে ভাগ করা যায় ।

যেমন বায়ার রিকুয়েষ্ট,বিড/প্রোপোজাল তাহলে এই সব কেমন পদ্ধতি চলুন সেটা জানা যাক। একজন বায়ার বা ক্লায়েন্ট তার কাজের জন্য কিছু ভাল ফ্রিল্যান্সাররা কে খোঁজ করে এর জন্য সে কাজের বিবরনসহ একটি জব পোষ্ট করে। এখন সেখানে ফ্রিল্যান্সাররা বায়ার বিবরন পড়ে কতো টুকু সময়ে,কতো টাকার বিনিময়ে কাজরে সাথে কী কী সুবিধা দেওয়া হবে,কেন তাকেই বায়ার হায়ার করবে ইত্যাদি নিয়ে লিখিত একটি প্রোপাজাল পাঠায় । এরপর বায়ার সকল প্রোপোজল যাচাই করে যোগ্য ফ্রিল্যান্সারকে তার কাজের জন্য হায়ার করে। মূলত এই প্রক্রিয়াই বিড/বায়ার রিকুয়েষ্ট বা ্প্রোপেজাল।

বায়ার রিকুয়েষ্ট/বিড/প্রোপেজাল দেওয়ার সময় লক্ষনীয় বিষয়ঃ-

প্রথমতো আপনাকে অবশ্যই বায়ারের কাজের বিবরন আগে ভাল করে পড়ে নিতে হবে। আপনি যদি ইংরেজী বুঝতে না পারনে তাহলে গুগল অনুবাদের সাহায্য নিতে পারেন। এরপর বায়ার কী চাই সেটি সম্পর্কে আপনার ধারনা  আছে কী না, তা যাচাই করতে হবে। আপনি যে প্রোপোজাল পাঠাবেন তাতে যেন কোন ইংরেজী বানান বা অন্য কোন ভুল না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কী কী বিষয় ফলো করলে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকেঃ-

১। আপনাকে বায়ারের কাজের বিবরন সময় নিয়ে সম্পূর্ন ভাল করে একবার পড়ে নিতে হবে।

২। বায়ার যা চাই সেটি আপনি  করে দিতে পারেবন কী না তা খেয়াল করতে হবে।

৩। দ্রুত গতিতে বায়ার রিকুয়েষ্ট দেওয়া যাবে না।

৪। প্রোপোজাল কপি পেষ্ট করে দেওয়া যাবে না। বায়ারের কাজের বিবরনে বায়ার কাজের নাম বা কম্পানির নাম দিয়ে থাকলে সেটি আপনি আপনার প্রোপেজালে যোগ করে দিবেন । এতে করে বায়ার বুঝতে পারেব আপনি তার কাজের বিবরন ভাল কলে পড়েছেন।

৫। প্রোপোজাল বেশি লং বা বড় করা যাবে না শুধু বায়ারের চাহিদা মতো মেইন বিষয় গুলো হাইলাইট করতে হবে।

৬। প্রোপোজাল নিজের মতো করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন কারো থেকে কপি করবেন না।

৭। প্রোপোজালে বায়ারকে আকৃষ্ট করার জন্য আপনাকে হায়ার করার পূর্বে আপনি তাকে কিছু কাজের ডেমো করে দিবেন সেটি উল্লেখ করুন। এতে কারে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

৮। বায়ার তার কাজ করে দেওয়ার জন্য যে সময় উল্লেখ করেছে আপনি কাজের কোয়ালিটি অনুসারে একটু দ্রুত করে দেওয়ার জন্য বলুন।

৯। আপনি বায়ারকে আকৃষ্ট করার জন্য টাকার পরিমান কম হলেও সম্ভাব্য সকল সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করুন। নতুন হিসেবে কাজ পাওয়ার জন্য আপনাকে একটু কম বাজেটেই কাজ করতে হবে।

১০। আপনি মনে করবেন আপনি যা যা সুযোগ বায়ার কে দিবেন তা সবার চেয়ে আলাদা।

১১। অনেকে মনে করে অনেক জন প্রোপোজাল দিয়ে দিয়েছে এতো পরে আমি দিয়ে কাজ পাবো না । এটি ভুল ধারনা। অনেকেই দ্রুত বায়ার রিকুয়েষ্ট দেওয়ার জন্য  কোন কিছু না পড়ে কপি পেষ্ট করে । তাই আপনি যদি সব কিছু পড়ে বুঝে ভাল মতো প্রোপোজাল দিতে পারেন তাহলে আপনার ওদের চেয়ে কাজ পাওয়ার সম্ভনা বেশি থাকবে।

উপরের সকল বিষয়গুলো ফলো করলে একজন নতুন হিসেবেও আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি ইনশাআল্লাহ। তবে সবার কছেই একটি কথা কেউ কাজ ভাল মতো না শিখে মার্কেটে কাজের জন্য আসবেন না। সময় নিয়ে কাজ ‍শিখুন, জানুন,  ‍বুঝুন তাহলে সাকসেস হবেই ইনশাআল্লাহ। আর কেউ চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারকের হাতে পড়বেন না। মনে রাখবেন বাংলাদেশে সফল ফ্রিল্যান্সারের চেয়ে সফল চিটার, বাটপার বেশি। তাই সব সময় গুগল,ইউটিউব আর পরিচিত বিশস্ত ছোট কিংবা বড় ভাইয়ের সাহায্য নিন।

ফাইবারে কী করে বায়ার রিকুয়েষ্ট দিবেন তার ছবিসহ দেওয়া হলোঃ-

প্রায় সব মার্কেটপ্লেসেই  বায়ারদের প্রোপোজাল দেওয়া একই তবে আমি এখানে ফাইবারের টা দেখালাম..

প্রথমে আপনাকে পিসিতে ফাইবার লগইন করতে হবে মোবাইলে না করাই ভাল। এর পর প্রেফােইল বা ড্যাসবোর্ডে ক্লিক করুন..

এর পর মোর অপশনে ক্লিক করুন তারপর বায়ার রিকুয়েষ্টে ক্লিক করুন।


এরপর নিচের এমন  উইনডো আসবে । ডানপাশে মোট ১০ বায়ার রিকুয়েষ্ট দেখাচ্ছে যা আপনি ১০ টি বায়ারকে দিতে পারবেন। প্রতিদিন আপনি ১০টি করে বায়ার রিকুয়েষ্ট পাঠাতে পারবেন। বাম পাশে  এক্টিভ এবং আপনার সর্বমোট প্রেরণ করা রিকুয়েষ্ট দেখাবে। আর ডানপাশে যে অল সাবক্ট্যাগরি দেখাচ্ছে সেখান থেকে আপনি আপনার একাধিক ক্যাটাগরিতে গিগ থাকলে যে কোন একটি সিলক্টে করতে পারবেন।

প্রথমে অটো রিফ্রেশার অন থাকলে অফ করে দিন। এরপর দেখুন বায়ার রিকেুযেস্ট ফেইক নাকি রিয়াল?

কিভাবে ফেইক বায়ার রিকেুয়েস্ট চিনবেন?

প্রথমে বায়ার রিকুয়েস্ট, বায়ারের প্রোফাইল পিকচার ও তারিখ সহ সিলেক্ট করে কপি করুন।


এরপর নোট প্যাড এ পেস্ট করুন। তারিখের পর বায়ারের ইউজারনেম দেখতে পাবেন। 


এই ইউজারনেম কপি করে fiverr.com/ইউজারনেম লিখে সার্চ করুন। তার প্রোফাইল দেখতে পাবেন। সে আসলেই বায়ার কিনা। কোন রিভিউ আছে কিনা দেখে নিন। সেলার হলে তিনি আগে কোন কাজ করিয়েছে কিনা দেখুন। অনেক নতুন সেলার বায়ার সেজে অফার সেন্ট করে । এসবে রিকুয়েস্ট পাঠালে কাজ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।


এরপর সেন্ড অফারে ক্লিক করতে হবে। তার পার আপনি যে গিগটি দিয়ে বায়ারের কাজে অংশগ্রহন করতে চান বা আপনার কাজ যে গিগের উপরে সে গিগটি সিলেক্ট করুন তার পর সাবমিট অফারে ক্লিক করুন। 


তারপর বায়ারের প্রোজেক্ট ডিটেইলস পড়ুন


এরপর আপনি বায়ারের প্রোজেক্ট ডিটেইলস  অনুসারে আপনার প্রেপোজাল লিখুন আর নিচের অফশন গুলোতে কী কী বায়ারেকে দিবেন তা সিলেক্ট করুন এবং শেষে সেন্ড করুন।

ফ্রিল্যান্সিং এর পরিপূর্ণ গাইডলাইন পেতে নিচের পোস্টগুলো দেখুন। 

পোষ্টটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের জানার সুযোগ করে দিন। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে যে কোন সহযোগীতা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে মেসেজ করুন।

 ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url