FREELANCERS IT https://www.freelancersit.com/2020/12/blog-post_9.html

কোকাকোলার জনপ্রিয়তা ও সফলতা

 সফট ড্রিংকস এর কথা শুনলেই সর্বপ্রথম যে নাম আসে সেটা হলো কোকাকোলা। তবে বাজারে আরো অনেক সফট ড্রিংকস থাকলেও সবার পছন্দে সর্বপ্রথম থাকে কোকাকোলা। 

তাই কি কারণে কোকাকোলা এতোটা জনপ্রিয় এবং দিনশেষে সব ড্রিংকস এর রাজা হয়ে কেনো আছে তা জানতে হলে আর্টিকেলটি শেষ অবদি পড়ার অনুরোধ রইলো।


কোকাকোলা ড্রিংকস- এক অনন্য পানীয়

কোকাকোলার ইতিহাসটা যদি জানতে চাওয়া হয় তবে বলবো এর ইতিহাসটা অনেকটা ইন্টারেস্টিং। তাই এর ইতিহাসের ব্যাপারে তবে জানা যাক।

ইতিহাস

কোকাকোলার সূচনা হয় ১৮৮৫ সালে যখন জন পেম্বারটন নামের একজন প্রাক্তন কনফিডারেল কর্ণেল তার ব্যথানাশক হিসেবে মরফিনের বদলে একটি ফর্মূলা আবিষ্কার করেন।স্নায়ুব্যাধী বা মাথা ব্যথার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রথমত এতে অ্যালকোহল ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে এর উপর নিষেধাজ্ঞা দিলে পেম্বারটন এরপর নন-অ্যালকোহল ফর্মূলা তৈরি করে। এতে কোকা গাছের নির্যাস থাকায় এর নাম দেয়া হয় "কোকাকোলা"।


পরবর্তীতে অনেকেই পেম্বারটনের থেকে ফর্মূলা নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও কোকাকোলার পেটেন্ট ছিলো জন পেম্বারটনের কাছেই। অবশেষে আসা শ্যানলার নামের একজন কোকাকোলার ফর্মূলাটি কিনে নেন। তবে এর ক্ষেত্রেও অনেক মতানৈক্য আছে,অনেকেই মনে করেন শ্যানলর পেম্বারটনের ভুয়া স্বাক্ষর দেখিয়ে হাতিয়ে নেন, অন্যস্থানে জানা যায় পেম্বাটনের স্ত্রীর থেকে শ্যানলার কিনে নেন কারণ পেম্বারটনের সন্তান ছিলো ছোটো এবং পেম্বারটন না থাকায় তার বাধা দেয়ার কিছু ছিলোনা। তবে মূলত কোনটা সত্য তা নিয়ে আজো রয়ে গেছে এক রহস্য।


কোকাকোলার চাহিদার সূচনা

শুরুতে কোকাকোলা স্থানীয় কাউন্টারগুলোতে পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। চাহিদা বৃদ্ধির বদৌলতে কোকাকোলা বোতলজাত করা হয়।প্রথম বছর কোকাকোলা প্রতি বোতলের মূল্য ৫ সেন্ট করে বিক্রি করে এবং প্রতিদিন গড়ে ৯ গ্লাস। বর্তমানে কোকাকোলার সুদূরপ্রসারের কারণে প্রতিদিন গড়ে ১.৯ বিলিয়ন কোকাকোলার পন্য বিক্রি হয় যা প্রতি চারজনে ১জন বলা যেতে পারে।


প্রতিদিনের বিক্রয়ের  কোকাকোলা দিয়ে ২৪০টি অলিম্পিকের সুইমিং পুল ভরা যাবে অথবা সারিবদ্ধভাবে সাজালে পৃথিবী ৫বার প্রদক্ষিন করা যাবে। তবে এইভাবে চললেও তাদের পরতে হয়েছে বিভ্রান্তিতেও কারণ এতো বিক্রির ফলে সবাই যত্রতত্র কোকাকোলার বোতল ফেলায় আর্বজনায় তৈরি হতে থাকে সব জায়গায়। ফলস্বরূপ "ব্রেক ফি ফর্ম প্লাস্টিক" এর সমীক্ষা অনুযায়ী কোকাকোলা সবচেয়ে দূষনকারী ব্র‍্যান্ড । তাই কুখ্যাতি রয়েই গেছে। তারপরেও  কোকাকোলা তাদের ফ্যাক্টরিকে করা হয়ে পরিবেশের সাথে বন্ধুসুলভ এবং তাছাড়া প্রতিটি ফ্রীজগুলোকে করা হয়েছে সিএফসি ফ্রী।

কোকাকোলার চাহিদা

যেহেতু সবচেয়ে বেশি চাহিদা কোকাকোলার তাই সবাইই কোকাকোলা পান করবেই। তার ভিত্তিতে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন দেশগুলো আর চাহিদা কমের দেশগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানানো হলো। বেশি চাহিদার দেশগুলো হলোঃ

  • মেক্সিকো 
  • আমেরিকা 
  • কানাডা


জরিপে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি কোকাকোলা পানকারী দেশ হলো মেক্সিকো। প্রতিবছর একজন মেক্সিকান গড়ে ৭৪৫টি বোতল কোক পান করেন। মেক্সিকোর পরেই আমেরিকাতে এবং কানাডাতে বাৎসরিক জনপ্রতি যথাক্রমে ৪০৫ এবং ২৫৯টি বোতল কোক পান করেন।কম চাহিদার দেশগুলো হলোঃ

  • চীন
  • ভারত


চীন এবং ভারতে সবচেয়ে কম কোক পান করা হয়। এক বছরে প্রতি একজন গড়ে ১২টি এবং ৩৮টি কোক পান করেন। শুধুমাত্র কিউবা এবং উত্তর কোরিয়াতেই কোকাকোলা বিক্রি করা হয়না। কোকের চাহিদা এতোই যে অনেক দেশে পানির বিকল্প হিসেবে কোক ব্যবহার হয়ে থাকে।


কোকাকোলার বাজার বিস্তৃতি

কোকাকোলার বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৮০ মিলিয়ন ডলার। বর্তমান চাহিদা বা সবকিছু মিলিয়ে যদি অন্য কোম্পানির সাথে তুলনা করা যায় তবে ব্যান্ডউইজার,সাবওয়ে,পেপসি এবং কেএফসির এর বাজারমূল্য একত্রিত করলেও তা কোকাকোলার সমান না। 


বর্তমানে কোকাকোলা তাই সকলের চিরাচরিত হওয়ায় তারা বিশ্বের এক নম্বর কোমল পানীয় ব্র‍্যান্ড হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। বর্তমানে পৃথিবীর ৯৬% মানুষ কোকাকোলার লাল সাদা লোগোটি চিনে। 


কোকাকোলার অবিশ্বাস্যরকম জনপ্রিয়তা

শুনলে হয়তো অবাক হবেন বর্তমানের বাজারে এক নম্বর পানীয় ব্র‍্যান্ড তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য মাত্র ১০ শতাংশ টাকা খরচ করে থাকেন। কার্বোনেটেড বেভারেজের প্রায় অর্ধেকেরো বেশি বাজার দখল করে রেখেছে কোকাকোলা। এছাড়া নন-কার্বোনেটেড এর বাজারেও বেশ জায়গা দখল করে রেখেছে কোকাকোলা।তাদের প্রায় ৫০০টি ব্র‍্যান্ডের প্রায় ৩,৫০০টিরো বেশি পন্য বাজারে আছে।

আপনি যদি দৈনিক কোকাকোলার একটি করে কোক পান করতে চায় তাও তার ৯ বছর লেগে যাবে সবগুলো ট্রাই করতে।বর্তমানে সবচেয়ে বিক্রিত কোমল পানীয় এর পাঁচটিই কোকাকোলার। তবে শুধুমাত্র কোকাকোলার পাশে দাঁড়াতে পেরেছে তাদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দী সে হলো পেপসি। কোকাকোলা মূলত ১৯২২-১৯৩৩ সালের দিকে পেপসিকে কিনে নিতে বললে কোকাকোলা তা প্রত্যাখান করে দেন। কোকাকোলার সাফল্যর পরে কিছু পন্য যেমনঃ কোকাকোলা ডায়েট,স্ট্রবেরি, লাইম কোক বাজারে আনে। আর এইগুলো বেশ ভালো সারা ফেলে জনগণের কাছে।


এছাড়াও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে আমেরিকার সব পন্য বন্ধ হয় যায়। তাই তখন কোকাকোলার ফর্মূলা ব্যবহার করে "ফান্টা" নামক কোক তৈরি করা হয়। যা বর্তমানে কোকাকোলার পর বেশ সারা ফেলে দেয়া এবং বহুল বিক্রিত পন্য এটি।


কোকাকোলার যুগান্তকারী ট্যাকটিস

আশির দশকের শেষের দিকে কোকাকোলার একশ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্ব মূহুর্তে কোকাকোলা একটি নতুন কোক বাজারে আনে। যার নাম দেয়া হয় "কোক নিউ" যা মূলত কোকাকোলার থেকে ভিন্নধর্মী স্বাদের ছিলো। কোকাকোলা চাইলেই পারতো তাদের পুরাতন কোকের পাশাপাশি রাখতে পারতো কিন্তু তারা মূলত রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে নিউ কোকের আবির্ভাব ঘটান।


সবাই ভেবেছিলো বাজার নিচে নেমে যাবে কিন্তু নতুন কোকের স্বাদ পেপসির কিংবা পুরাতন কোক থেকে ভালো হওয়ায় তারা পুরাতন কোককে ভুলে যায়। তবে কিছুদিনের মধ্যে তারা পুরাতন কোকের শূন্যতা অনুভব করতে পারে। অনেক আন্দোলনের পর প্রায় ৩ মাস পর কোকাকোলা আবার পুরানো কোকলে নতুন লেবেল "কোকাকোলা ক্ল্যাসিক" নামে বাজারে ছাড়েন। এরপর থেকে মানুষের মধ্যে কোকাকোলার চাহিদা আরো বেশিভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কোকাকোলা পারলেই নিউ কোক রাখতে পারতো কিন্তু কয়েকদিন পর তা বাজার থেকে উঠিয়ে নেন। আর হয়ত এই কারণেই আরো ১০০ বছর যাবৎ কোকাকোলা সবার কাছে টিকে থাকবে।


কোকাকোলার জনপ্রিয়তা

কোকাকোলার সফলতার কথা যদি আসে তবে যে কথাটি আসবে "ক্রিয়েটিভ মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটিজি"। তারা তাদের কোনো বিজ্ঞাপনে আপনাকে তাদের পন্য ক্রয়ের জন্য বলবেনা বরং খুশি এবং আনন্দের সাথে জীবন উপভোগের ব্যাপারে আগ্রহী করবে। যেখানে পেপসির সবকিছু সেলিব্রেটি নির্ভর সেখানে কোকাকোলা বেশি করে তার ক্রেতা বা জনসাধারণের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।  সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে একুশে,রমজান বিভিন্ন বড় বড় অনুষ্ঠানে তারা বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।

কোকাকোলার জনপ্রিয় ক্যাম্পেইন

  • হাগ এন্ড শেয়ার

এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মূলত অন্যর সাথে কোকাকোলা শেয়ার করার। একে অন্যর সাথে শেয়ার করে কোকাকোলার বিস্তৃতি ঘটানো


  • শেয়ার ক্যান

কোকাকোলার বাজার বৃদ্ধির মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম শেয়ার করার ক্ষেত্রে ভালো সারা পাওয়ার একটি শেয়ার ক্যান। যেখানে দুইটি ক্যান একসাথে পাওয়া যেতো এবং অর্ধেক করে শেয়ার করা যেতো। এক গবেষণায়, ৩০জন মানুষকে শেয়ারিং ক্যান দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং শেয়ারিং ক্যানের মাধ্যমে সকলে শেয়ার করে সফল করে।


ডি  ব্র‍্যান্ডিং ট্যাকটিস

কোকাকোলার ডি ট্যাকটিস ছিলো সবচেয়ে স্বনামধন্য জনপ্রিয়তা এনে দেয়ার মূল কারণ। কোকাকোলা প্রথম অস্ট্রেলিয়ার ১৬০টি সাধারণ নাম নিয়ে বোতলের লেবেলে ছাপিয়ে ছাড়ে যা অস্ট্রেলিয়ার ৪২% জনগনের নাম কভার করে। সেইটার ভালো রেসপন্স ও পাওয়া যায় সেই বছর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন কোক বিক্রি হয় যেখানে অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা ২৩ মিলিয়ন।  তাহলে বলা যায় প্রতিজন গড়ে ১০টি করে কোক কিনেছে ওই সামারি অনুযায়ী।


কোকাকোলার ডি ব্র‍্যান্ডিং ট্যাকটিস ভালো হওয়ায় তারা আরো ৭০টি দেশে চালায় যার মধ্যে প্রায় ১৭,০০০ এর বেশি নাম সংযোগ করা হয়। নামের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ভাষা অনুযায়ী মা,বাবা,ভাই,বোন ইত্যাদি বোতলের লেবেলের গায়ে দিয়ে ছাপা হয়। তখন নিজেদের থেকে অন্যদেরকে কিনে দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

ডি ব্র‍্যান্ডিং ট্যাকটিস এর সফলতার কারণ

আমরা সবাই নিজেদের নাম নিয়ে অনেক আলাদা চিন্তাশীল থাকি। আর প্রত্যেকের নাম স্বতন্ত্র হয় তাই আপনি যদি নিজের নাম কোথাও দেখেন আপনি আবেগে অভিভূত হবেন। তাই সেই আবেগের দিক থেকেই মূলত এই ডি ব্র‍্যান্ডিং ট্যাকটিস অনেকটা বেশি সাফল্য হয়। শুধুমাত্র কোকাকোলাই একমাত্র কোম্পানি যে বুঝিয়েছে শুধু মানুষকে পন্য কিনতে না বলে শুধু তাদের সাথে সংযুক্ত থেকেই পন্য বিক্রয় করা সম্ভব। 


হয়ত এই কারণগুলোতেই আজ কোকাকোলা পৃথিবীর সর্বোচ্চ কোমল পানীয় বিক্রয়কারী সংস্থা। ক্রেতা সন্তুষ্টিই যার মূল কারণ হতে পারি বলা যায়।


তাই আজ এই পর্যন্তই কোকাকোলার জনপ্রিয়তার মাপকাঠি নিয়ে। আশা করি আর্টিকেলটি আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগবে। ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। কোনোকিছু বুঝতে সমস্যা কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ।

অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

নটিফিকেশন ও নোটিশ এরিয়া